কুলাউড়া প্রতিনিধি: কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুরে জমি নিয়ে সংঘর্ষে হালিমা বেগম (৫০)নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্বামী তছই মিয়া ৮ জনকে আসামী করে কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মৃত খলিল উল্যাহর ছেলে তছই মিয়া অপর তিন ভাইসহ যে বাড়ীতে বসবাস করেন সে বাড়ীটিতে তিন দাগে ১০০ শতাংশ (০৩ কিয়ার) পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। সকল ভাইয়েরা আলাদা আলাদা থাকলেও তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিবাদী রাজিক আহমদ এর ষড়যন্ত্র ও তাদের সম্পত্তির লোভের কারণে এখনও ভাগ বন্টন করা হয়নি। তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির সকল কাগজপত্র ৪নং বিবাদী হাবিবুর রহমানের কাছে রয়েছে। তারা অনেকবার বাড়ীর জায়গা জমি ভাগ বন্টন করতে চাইলে আসামীরা ভাতিজা, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীসহ দূরসম্পর্কের আত্মীয় হওয়ায় তাদের বাধার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি ফলে, উক্ত মৌরসী জমির ভাগবাটোয়ারা নিয়া বিবাদীদের সাথে তছই মিয়ার বিরোধ চলে আসছে। উক্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে বিবাদীরা তছই মিয়া ও তার পরিবারের লোকজনের ক্ষতি সাধনের পায়তারায় লিপ্ত থেকে গত ১০/১০/২০১৮ ইং তারিখ সকাল ১০টা থেকে তার ছেলে মালিক মিয়া তাদের বসত ঘরের পিছনে তাদের জায়গায় টয়লেটের রিং বসানোর জন্য মাটিতে গর্ত করতে থাকে।
ঐ সময় তছই মিয়ার ভাই বিবাদী হাবিবুর রহমান ও মুরাদ আহমদ, বিবাদী রাজিক আহমদ এর প্ররোচনা ও হুকুমে তার ছেলে গর্ত করাকালীন বেলা অনুমান ১১.৩০টার সময় ঘটনাস্থলে এসে বাঁধা প্রদান করতঃ গালিগালাজ শুরু করে। তখন তছই মিয়ার ছেলে বিবাদীদেরকে গালিগালাজ করতে বাঁধা নিষেধ করে। তছই মিয়াও তাদের কথাবার্তা শুনে ঘর থেকে বের হয়ে তাদেরকে দাঙ্গা ফাসাদ করতে বাঁধা নিষেধ করেন। তাদের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেন। পরবর্তীতে সকালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ব আক্রোশ বশতঃ পূনরায় ঐদিন ১০/১০/২০১৮ তারিখ রাত অনুমান ১০.৩০ টার সময় তছই মিয়ার বসত ঘরের সামনে এসে তছই মিয়ার ভাই বিবাদী হবিবুর রহমান ও ছেলে মালিক মিয়াকে গালিগালাজ করতে থাকে।
তছই মিয়ার ছেলে বিবাদী হাবিবুর রহমানকে গালিগালাজ করতে বাঁধা নিষেধসহ বিবাদী এমন কার্যকলাপের বিষয়ে প্রতিবাদ জানাইলে সমূহ বিবাদীরা উত্তেজিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মারাত্মক আক্রমনাত্মক হয়ে পড়ে এবং ঐসময় বিবাদী সায়েম মিয়া, বিবাদী রহিমা বেগম কর্তৃক ঘর থেকে আগাইয়া দেওয়া অনুমান ৩/৪ হাত লম্বা একটি বাঁশের গুড়ালি দিয়া তছই মিয়ার ছেলে মালিক মিয়াকে মাথায় বাড়ি দিয়া প্রাণে হত্যার চেষ্টা করলে তছই মিয়ার ছেলে মাথা সরিয়ে নিলে প্রাণে রক্ষা পায়। ঘটনাস্থলে তাদের হাল্লাচিৎকার শুনে বিবাদী মানিক মিয়া তার হাতে থাকা চাকু নিয়া দৌড়াইয়া ঘটনাস্থলে আসিলে তছই মিয়া তাকে বাঁধা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলে বিবাদী মানিক মিয়া তার হাতে থাকা চাকু দিয়া প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে তছই মিয়ার বুকে আঘাত করলে তিনি ডান হাত দিয়া প্রতিহত করলে তার ডান হাতের মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলের মধ্যখানে লেগে মাটিতে পড়ে যায়। তাকে রক্ষা করার জন্য তার স্ত্রী হালিমা বেগম (৫০) এগিয়ে আসতে চাইলে বিবাদী সায়েম মিয়া ও বিবাদী হানিফ মিয়া তার স্ত্রী ভিকটিম হালিমা বেগমকে পিছন দিক দিয়া জড়িয়ে ধরে রাখে। তখন বিবাদী হাবিবুর রহমান হুকুম দিয়া বলে যে, মা-বাপ-পুতকে জানে শেষ করিয়া দে। বলার সাথে সাথে বিবাদী মানিক মিয়া তার হাতে থাকা চাকু দ্বারা ভিকটিম হালিমা বেগমকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যেেএলোপাতাড়ী কুপাতে থাকলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তছই মিয়া ও তার পরিবারের লোকজনের ডাক চিৎকারে করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে বিবাদীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বীরদর্পে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
মারাত্মক আহত হালিমা বেগমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণের উদ্যেগ নিলেও গাড়ি পেতে দেরী হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ঘটনাস্থলে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত হালিমা বেগম এর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সরকারী হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে।
উক্ত ঘটনায় তছই মিয়া (৫৫) পিতা মৃত খলিল উল্যাহ, সাং-হোসেনপুর, থানা-কুলাউড়া, জেলা-মৌলভীবাজার বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামী করে কুলাউড়া থানায় (মামলা নং-০৫, তারিখ-১১/১০/২০১৮ ধারা-১৪৩/৪৪৭/৩২৩/328/325/326/30/201/506/৩৪ পেনাল কোড)। দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, মানিক মিয়া (২৭) ও হানিফ মিয়া (২৯), উভয় পিতা হাবিবুর রহমান, মুরাদ আহমদ (৩৪) তছির আলী, সর্বসাং-কাদিপুর, হাবিবুর রহমান (৬২) পিতা-মৃত খলিল উল্যাহ, রাজিক আহমদ (২৭) পিতা-আব্দুল জব্বার, রহিমা বেগম (৫৫) স্বামী হাবিবুর রহমান, তৈয়বুর রহমান (৫৫), মাওলানা ছাইদুর রহমান (৫০) উভয় পিতা-মৃত খলিল উল্যাহ, সর্বসাং-হোসেনপুর, থানা-কুলাউড়া, জেলা-মৌলভীবাজার।
উল্লেখ্য, কাদিপুরের বাসিন্দা রাজিক আহমদ এর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কুলাউড়া থানার মামলা নং-০৬, তারিখ-০৭/06/2016 ধারা-১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের ৯ (ক) দায়ের করা হয়। উক্ত মামলা থেকে জানা যায়, এসআই (নিঃ)/ বিজয় চন্দ্র রায় সঙ্গীয় ফোর্সসহ কুলাউড়া থানা এলাকায় রাত্রীকালিন বিশেষ অভিযান ডিউটি করাকালীন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুলাউড়া থানার ৬নং কাদিপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত পেকুর বাজারস্থ আসামী রাজিক আহমদ এর দখলীয় রাবিয়া ভেরাইটিজ ষ্টোর নামক দোকান ঘরের পৌঁছাইয়া তিনি সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় আসামী রাজিক আহমদকে ঘটনাস্থলে আটক করেন। অতঃপর উপস্থিত সাক্ষী দের সম্মুখে দোকান ঘরের ভিতরে তল্লাশী করে দোকান ঘরের ভিতরে থাকা ক্যাশ টেবিলের ড্রয়ারের ভিতর থেকে জব্দ তালিকায় বর্ণিত (১) ০১ (এক) টি কালো রংয়ের পলিপ্যাকের ভিতরে ৫০ (পঞ্চাশ) পিস কথিত ইয়াবা ট্যাবলেট যাহার মধ্যে ৪৭ (সাতচল্লিশ) পিস গোলাপী রংয়ের এবং ০৩ (তিন) পিস সবুজ রংয়ের কথিত ইয়াবা ট্যাবলেট। যাহার প্রত্যেকটির গায়ে ইংরেজীতে WY লেখা আছে প্রাপ্ত হইয়া ইংরেজী ০৬/০৬/২০১৬খ্রিঃ তারিখ ২১.১০ ঘটিকার সময় জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করেন। ধৃত আসামী রাজিক আহমদ (২৪) পিতা-আব্দুল জব্বার, গ্রামঃ হোসেনপুর, থানা-কুলাউড়া, জেলা-মৌলভীবাজার।
এছাড়াও এসআই (নিঃ) যীশু দত্ত, কুলাউড়া থানা, মৌলভীবাজার সঙ্গীয় সহ গত ২০/১১/২০১৮ খ্রিঃ তারিখ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করিয়া কুলাউড়া থানাধীন ৬নং কাদিপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত পেকুর বাজারস্থ পলাতক আসামী রাজিক আহমদ এর দখলীয় রাবিয়া ভেরাইটিজ ষ্টোর নামক দোকান এর সামনে অবস্থান করে উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে দোকানের ভিতর তল্লাশী করিয়া দোকানঘরে থাকা মালামালের রেক এর নীচে একটি কালো রংয়ের পলিথিন দ্বারা মুড়ানো অবস্থায় (ক) ছয় শুট বিশিষ্ট সিলিন্ডারে কাঠের বাটযুক্ত একটি বিদেশী রিভলবার (আগ্নেয়াস্ত্র)। যাহার বাট সহ দৈর্ঘ্য অনুমান ০৯ ইঞ্চি। যাহার বাটের দৈর্ঘ্য ০৩ ইঞ্চি। ফায়ারিং পিন ও ট্রিগারগার্ড যুক্ত। বড়িতে খুদাই করা ইংরেজীতে USA লেখা আছে পেয়ে গত ২০/১১/২০১৮ খ্রিঃ সকাল ১০.৪৫ ঘটিকার সময় জব্দ তালিকামূলে জব্দ করেন। পলাতক আসামী ১। রাজিক আহমদ (২৬) পিতা-আব্দুল জব্বার, গ্রামঃ হোসেনপুর, থানা-কুলাউড়া, জেলা- মৌলভীবাজার। এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার মামলা নং-২২, তারিখ-২০/১১/২০১৮ ধারা-১৮৭৮ সনের THE ARMS ACT (AMENDMENT ২০০২) এর 19A ধারা।