শীতে শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে করণীয়

শীতকালে শিশুরা ঠান্ডা বা ফ্লুতে সহজেই সংক্রমিত হয়। এসময় এসব সংক্রমণের হার এতই বেড়ে যায় যে এটাকে ঠান্ডা ও ফ্লুর মৌসুম বলা যেতেই পারে। শিশুরা বছরে বহুবার ছোটখাট সংক্রমণে অসুস্থ হতে পারে।বিশেষজ্ঞদের মতে, একটা শিশু বছরে ছয় থেকে আট বার ঠান্ডা-ফ্লুতে ভুগতে পারে এবং এটা স্বাভাবিক।তাই অসুস্থতার হার কমাতে শিশুর ইমিউনটি (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা) বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।শীতকালে শিশুর প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়, অন্যথায় ঠান্ডা-ফ্লু থেকে নিউমোনিয়া ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি আছে।এখানে ঠান্ডার দিনগুলোতে শিশুর ইমিউনিটি বাড়ানোর উপায় উল্লেখ করা হলো।

* ফল ও সবজি খাওয়ান

শিশুর শীতকালীন খাদ্যতালিকায় গাজর, কমলা ও অন্যান্য ক্যারোটিনয়েডস সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। দ্য ফ্যামিলি নিউট্রিশন বইয়ের লেখক উইলিয়াম সিয়ার্স বলেন, ‘ক্যারোটিনয়েডস হলো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বর্ধক ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস।’ এসব ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস শরীরে সংক্রমণ বিরোধী শ্বেতরক্তকণিকার উৎপাদন বাড়াতে পারে। ইন্টারফেরনও বাড়াতে পারে। এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরিতে বাধা দেয়। গবেষণা বলছে, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ ডায়েট ভবিষ্যতে ক্যানসার ও হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। শীতকালে শিশুকে প্রতিদিনই ফল ও সবজি খাওয়াতে চেষ্টা করুন।

* ঘুমের সময় বাড়ান

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাবে শরীরে প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ কমে গিয়ে সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যায়। এসব কোষ হলো ইমিউন সিস্টেমের সমরাস্ত্র যা সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণু ও ক্যানসার সেলসকে আক্রমণ করে। তাই শীতকালে শিশুর অসুস্থতার প্রবণতা কমাতে বয়স অনুসারে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের মতে, তিন থেকে পাঁচ বছর ও ছয় থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের দিনরাত মিলিয়ে যথাক্রমে ১০-১৩ ঘণ্টা ও ৯-১২ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অবস্থিত চিলড্রেন’স হসপিটালের অন্তর্গত সেন্টার ফর হলিস্টিক পিডিয়াট্রিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক কেথি কেম্পার বলেন, ‘আপনার শিশু দিনে ঘুমাতে না চাইলে রাতে আগেভাগে ঘুমানোর জন্য তাগাদা দিতে হবে।’

* শরীরচর্চা করান

যখন পিতামাতা শরীরচর্চা করেন, তখন শিশুদেরকেও সঙ্গে রাখা ভালো। আপনাকে এমন শরীরচর্চা করতে হবে, যা আপনার শিশুর জন্যও উপযুক্ত। তবে আপনি অন্যসময়ে আলাদাভাবে কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরচর্চাও করতে পারেন। মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের পিডিয়াট্রিক ইমিউনোলজিস্ট রঞ্জিত চন্দ্র বলেন, ‘নিয়মিত শরীরচর্চায় প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে প্রাকৃতিক ঘাতক কোষের সংখ্যা বাড়ে।এই উপকারিতা শিশুরাও পেতে পারে, যদি তাদেরকে শরীরচর্চা করানো হয়।’ শিশুদের ফিটনেস বাড়াতে চাইলে আগে পিতামাতাকে ভালো রোল মডেল হতে হবে। পিতামাতা শরীরচর্চা করলে শিশুরাও ফিটনেস ধরে রাখতে উৎসাহী হয়। মিসৌরির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রেনি স্টাকি বলেন, ‘শিশুকে নিয়ে বাইরে হাঁটতে যাওয়াই যথেষ্ট নয়, অন্যান্য শরীরচর্চাও করতে হবে।’

আপনার শিশুর কল্যাণে আপনাকে ধূমপান ছাড়তে হবে। কারণ সিগারেটের ধোয়া শিশুর শরীরেও প্রবেশ করতে পারে। এটাকে সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক বলে। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় অবস্থিত সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের অন্তর্গত অফিস অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথের এপিডেমিওলজিস্ট বিভারলি কিংসলে বলেন, ‘সিগারেটের ধোয়ায় ৭,০০০ এরও বেশি ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকে।এসবের অনেক কেমিক্যাল শারীরিক কোষকে উক্ত্যক্ত বা ধ্বংস করতে পারে।’ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোকের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া বেশি হতে পারে, কারণ তারা অধিক দ্রুত হারে শ্বাসকার্য চালায়। এছাড়া শিশুর প্রাকৃতিক বিষমুক্তকরণ তন্ত্রও তেমন সুগঠিত নয়। সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক শিশুদের এসআইডিএস, ব্রনকাইটিস, কানের সংক্রমণ ও হাঁপানির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

শীতকালে শিশুর অসুস্থতায় বিচলিত হবেন না। শিশুর ঠান্ডা লাগলে, ফ্লুতে আক্রান্ত হলে অথবা গলা ব্যথা করলে কেউ কেউ চিকিৎসককে প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক লেখার জন্য চাপ দেন। কিন্তু এটা মোটেই ভালো কাজ নয়। চিকিৎসক ভালোমতোই জানেন কোন ওষুধ দিতে হবে। বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের পিডিয়াট্রিকস অ্যান্ড পাবলিক হেলথের অধ্যাপক হাওয়ার্ড বোশনার বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক শুধু ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট রোগেরই চিকিৎসা করতে পারে। কিন্তু শিশুদের অধিকাংশ রোগই ভাইরাস সৃষ্ট।’ শিশুকে অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে অপকারই হয়ে থাকে। রোগসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণের নিরাময় কঠিন হয়ে পড়ে, এমনকি কানের সাধারণ সংক্রমণও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *