জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মোবাইল ফোনে ডাক শুনিয়ে ১১টি ডাহুক পাখি শিকার করা দুই তরুণ আসাবুদ্দিন (২০) ও ওয়ারিছ আলী (১৭) কে আটক করেছে বনবিভাগ। ৬ মে শনিবার সকালে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফানাই নদী এলাকা থেকে ওই দুই তরুণকে আটক করেছে স্থানীয় বনবিভাগ। পরে দুপুরে বনবিভাগের নলডরী বিট কার্যালয়ে এক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান। পরে উদ্ধার করা পাখিগুলোকে অবমুক্ত করা হয় এবং ওই দুই তরুণকে জরিমানা করে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
ভ্রাম্যমান আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দিগলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ নুর মিয়ার ছেলে মোঃ আসাবুদ্দিন (২০) ও একই এলাকার বাসিন্দা মোঃ তাহির আলীর ছেলে মোঃ ওয়ারিছ আলী (১৭) ডাহুক পাখি শিকারের জন্য স্থানীয় ফানাই নদীতে নামেন। এসময় নদীর একপাশে আলাদা পোষা ১টি ডাহুক পাখি খাঁচার ভেতর ও ডাহুক পাখির ডাক রেকর্ডকৃত একটি মোবাইল ওই খাঁচার পাশে রাখেন। মোবাইলে ডাক শুনে একে একে ১০টি ডাহুক পাখি তাদের ফাঁদে এসে ধরা দেয়। পরে শিকার করা পাখিগুলো পরিবহন করে বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়ার সময় বনবিভাগের নলডরী বিট অফিসার মোঃ আব্দুল মান্নান দুই তরুণ আসাবুদ্দিন ও ওয়ারিছকে আটক করেন। পরে তিনি তাৎক্ষণিক বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উদ্দিনকে জানালে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসানকে অবগত করেন। পরে দুপুরে বিট অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান আসাবুদ্দিনকে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং বয়স বিবেচনায় ওয়ারিছ আলীকে জরিমানা না করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল মতিনের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে দুজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে শিকার করা ১১টি ডাহুক পাখিকে ফানাই নদীতে অবমুক্ত করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ও কুলাউড়া থানার এ এসআই মোঃ আবু তাহের।
এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর কর্মধা ইউনিয়নে অবৈধভাবে জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে ৪টি পাকড়া শালিক ও ১৪ টি আমারি পাখি শিকার অপরাধে পাট্টাই গ্রামের রকিব আলীর পুত্র দিলোয়ার মিয়া (২২) কে এক মাসের কারাদন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল ভ্রাম্যমান আদালত।
পাখি শিকারী দুই তরুণ আসাবুদ্দিন ও ওয়ারিছ বলেন, পাখি শিকার করা দন্ডনীয় অপরাধ সেটা আমরা জানতাম না। ইউটিউব থেকে মোবাইল ফোনে ডাহুক পাখি শিকার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ডাহুক পাখির ডাক ডাউনলোড করে মোবাইলে রেখেছি। জলাধারের নিকট তারা সেই রেকর্ড বাজালে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে পাখি। তখন বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে ফাঁদ পেতে জাল দিয়ে পাখি শিকার করেন। তারা জানান, জীবনের প্রথম পাখি শিকারে নেমে ১১টি পাখি শিকার করেছি। ভবিষ্যতে এ ধরণের কাজ আর কখনো করবো না।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, পাখি শিকারী দুই তরুণ তাদের অপরাধ শিকার করেছে। পরে বনবিভাগের সহযোগিতায় ১১টি পাখি অবমুক্ত করা হয়। পরে বন্যপ্রাণী আইনে আসাবুদ্দিনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ওয়ারিছ আলীকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের দুজনকে সতর্ক করা হয়।
বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ডাহুক পাখি দেখা যায়। নির্দয় শিকারিদের অত্যাচার আর বসবাসের জায়গার অভাবে প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। আইইউসিএন ডাহুককে নূন্যতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এই পাখি সংরক্ষিত।