সেরা ছাত্রীরা সরকারি ট্যাব থেকে বঞ্চিত!

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের ৯ম-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্রমিক নম্বরের সম্মিলিত মেধা তালিকার প্রথম তিনজনকে একটি করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ট্যাবলেট কম্পিউটার (ট্যাব) দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই নিদের্শনাটি উপেক্ষিত হয়েছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের সিঙ্গুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে বিদ্যালয়ের ৯ম-১০ম শ্রেণীর দুই মেধাবী ছাত্রীকে সরকারি ট্যাব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এদিকে গত ৭ জুন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ট্যাব বঞ্চিত এক শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাস্তবায়নাধীন জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্প-২০২১ থেকে পাওয়া ট্যাব প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে কুলাউড়া উপজেলার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম ও দশম শ্রেণির ২১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, গত ৫ জুন সিঙ্গুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনামূল্য সরকারি ট্যাব বিতরণ করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিহিত রঞ্জন দে ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শাহানারা বেগমের যোগসাজশে নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার প্রিয়া (রোল নং-৩) ও দশম শ্রেণীর ছাত্রী জুঁই আক্তার (রোল নং-৩) কে ট্যাব না দিয়ে তাদের পছন্দের অন্য দুইজন শিক্ষার্থী নবম শ্রেণীর ফারজানা ইয়াসমিন লিপা (রোল নং-২৩) ও  দশম শ্রেণীর মোঃ রাকিব মিয়া (রোল নং-৫) কে ওই ট্যাব দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক।

সিঙ্গুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার প্রিয়া পঞ্চম শ্রেণীতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত তার ক্লাস রোল ১ ছিল। বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শ্রেণীতে ভালো ফলাফল করলেও প্রিয়াকে ট্যাব থেকে বঞ্চিত করা হয়। প্রিয়া জানায়, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয়ের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগতি করেছি। আমার দাবি, একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে যেন সরকারি ট্যাব দেয়া হয় তাহলে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ আরো বেশি বাড়বে।

সিঙ্গুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিহিত রঞ্জন দে বলেন, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর ভূলের কারণে ওই ছাত্রীরা ট্যাব পায়নি। যেহেতু ভূল হয়ে গেছে তাহলে এখন কি আর করার। তবে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ছাত্রীদের ট্যাব কিনে দেয়া হবে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ চৌধুরী তুতি বলেন, মেধাবী ছাত্রীদের ট্যাব না দেয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার জরুরী সভা করে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরকে শোকজ করেছি। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় তাদের গাফিলতিতে ওই ছাত্রীদের ট্যাব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী বিদ্যালয় থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী ট্যাব সরবরাহ করা হয়েছে। তবে ট্যাব বিতরণে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, কুলাউড়ার মোট ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৫টি বিদ্যালয়ে ৬টি করে ২১০ জনকে ট্যাব দেয়া হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ট্যাব বিতরণ চলমান আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, ট্যাব বিতরণের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস ও পরিসংখ্যান অফিসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি নজরে এসেছে তাই সেটি খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ দেয়া হলে পূর্ণাঙ্গ একটি তদন্ত কমিটি করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া উপজেলার অন্যান্য বিদ্যালয়েও এমন অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটিও যাচাই করে দেখা হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *