আল আমিন আহমদ:: জমিজমা ও পারিবারিক বিরোধের জেরে অপ্রচারের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা ও হামলা করে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট এবং প্রাণ নাশের চেষ্টার প্রতিবাদ ও এর হাত থেকে মুক্তি এবং সুবিচার প্রার্থণা করেছেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর (রানীমুরা) গ্রামের বাসিন্দা ও কামিনীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মাসুক মিয়া। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ২টায় নিজ বাড়ীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বক্তব্য রাখেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- দীর্ঘদিন থেকে তার আপন বড় ভাই মশাহিদ মিয়া ও চাচাতো ভাই আনোয়ার হোসেন, জাকির হোসেন, কাওছার হোসেন, আরেক চাচাতো ভাই বেলাল হোসেন এবং চাচা দেলোয়ার হোসেন গংদের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিরোধ চলমান আছে। মশাহিদ মিয়া আমার মেয়েকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা-বার্তা বলিলে তার সাথে রিবোধ চরম আকার ধারণ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন ও প্রাণ নাশের চেষ্টায় বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। গত ০৮-১০-২০২২ইং তারিখে আমার মেয়ের সহপাঠি ও আমার চাচাতো বোন সুমাইয়া আক্তার (১৯) আমার বাড়ী বেড়াতে আসে। পরদিন ভোরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তার ভাই আনোয়ার হোসেন এসে তাকে নিয়ে যায়। ১৩-১০-২০২২ইং তারিখ রাতে জুড়ী থানা পুলিশ আমার বাড়ী এসে আমাকে ডেকে থানায় নিয়ে গেলে আমি জানতে পারি আনোয়ার হোসেন আমার উপর একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। তাই জুড়ী থানা পুলিশ আমাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। আমি গত ১৯-০৩-২০২৩ইং তারিখে জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ীতে আসি। ভিকটিমকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি মর্মে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। ১৯-০৫-২০২৩ইং তারিখে আমার মেয়ে মাহমুদা আক্তার ফাহিমা-কে কুলাউড়া উপজেলার দানাপুর নিবাসী রজব আলীর পুত্র সাফওয়ান আহমদ-এর নিকট শরিয়া মোতাবেক বিয়ে দেই। বিয়ের পর মেয়ের শ্বশুর বাড়ীর সাথে আমার সর্ম্পক ভাল ছিল। কিন্তু তাহাদের অশালিন কথা বার্তা, বেপরোয়া চলা ফেরার কারণে তাদের সাথে আমার সম্পর্কের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এই সুযোগে গত ২১-০৯-২০২৩ইং আমার আপন ভাই মশাইদ ও চাচাতো ভাই আনোয়ার, কাওছার ও কাওছারের বন্ধু কথিত সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম গং আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ীতে গিয়ে তাহার শ্বশুর ও স্বামীকে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েকে দিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করায়। কুলাউড়ায় সংবাদ সম্মেলনে কুলাউড়ায় কর্মরত জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার কোনো সাংবাদিক না থাকলেও তিনটি ফেসবুক আইডি/পেজ-এ একটি ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। জুড়ী থেকে মনিরুল ইসলাম কুলাউড়া গিয়ে কথিত সংবাদ সম্মেলনের নামে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা বর্ণনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে। যা আমার মান সম্মানে আঘাত করে ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। উক্ত প্রচার মাধ্যমে আমার মেয়ে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা বলেছে। ধর্ষণের কথা বলেনি। অথচ একটি কুচক্রীমহল প্রচার করেছে আমি নাকি আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছি। এরকম বানোয়াট কথা প্রচার করে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তুলে সাধারন সরল মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। আনোয়ার গংদের প্ররোচনায় অত্র এলাকার আলতাব আলীর পুত্র আব্দুস সহিদ এর নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত আবেগপ্রবণ দলবদ্ধ জনতা গত ২৪-০৯-২০২৩ইং তারিখে আমার বাড়ীতে অনুপ্রবেশ করে। বেআইনী ভাবে আমার বাড়ীর প্রধান গেট, ঘরের দরজা ও জানালা ভেঙ্গে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে। ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, এসি সহ প্রায় ২৪ লক্ষ টাকার মালামাল ভাংচুর করে এবং আমার উপর হামলা করে। আমি এ সময় প্রাণে বাচার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে বোরো ক্ষেতে দিকে দৌড়ে যেতে চাইলে তাহারা বোরো ক্ষেতে ফেলে আমাকে বেধড়ক মারপিট করে। আমি মরে গেছি মনে করে রক্তান্ত ও অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখে। পরে জুড়ী থানার পুলিশ ঘটনা স্থলে হাজির হয়ে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরদিন ২৫-১০-২০২৩ইং তারিখে আনোয়ার হোসেনকে প্রধান আসামী করে আমার স্ত্রী রেশমা বেগম ২২ জনের নাম উল্লেখ করে জুড়ী থানায় একটি মামলা (নং ০৮) দায়ের করেন। আসামিরা জামিনে এসে আবারও আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে এবং আসামিরা দলবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন সময় আমার বাড়ীর আশে পাশে ঘুরা ফেরা করে। এমতাবস্থায় আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। ভবিষ্যতে আবারও আমি ও আমার পরিবারের উপর মিথ্যা অপবাদ প্রচারের মাধ্যমে বড় ধরণের হামলার ভয়ে এবং বিগত দিনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সুবিচার পাওয়ার জন্য গত ১১-১০-২০২৩ইং তারিখে আমার স্ত্রী রেশমা আক্তার বাদী হয়ে মাননীয় বিচারক, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, সিলেট বরাবর পিটিশন মামলা (নং ২০৯/২০২৩ইং) দায়ের করেন।
মাসুক মিয়ার ছেলে নাইম আহমদ তার বক্তব্যে বলে- আমার চাচা মশাহিদ মিয়া আমাকে কু-পরামর্শ দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে আমার বোন মাহমুদা আক্তার ফাহিমার শ্বশুর বাড়ী কুলাউড়াস্থ দানাপুর গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে ২৫-০৯-২০২৩ইং পর্যন্ত বন্দি করে রাখেন। ঐ দিন চাচা কাওছার হোসেন ও সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম আমাকে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও ইউপি সদস্য শাওন মেম্বারের নিকট সমজিয়ে দেন। তাহারা চাচা মশাহিদ মিয়ার কাছে আমাকে হস্তান্তর করলে এদিন বিকেলে মশাহিদ চাচা আমাকে বাড়ীতে নিয়ে যান। এর আগের দিন (আমার বাবার উপর ও বাড়ীতে হামলার দিন) আমাকে কুলাউড়া মাগুরাস্থ আনোয়ার চাচার ভাড়া বাসার ৩ তলায় একটি কক্ষে সারাদিন তালা বদ্ধ করে রাখা হয়। গত ০৩-১০-২০২৩ইং তারিখে আমার বাবা আমাকে বলেন যে আমার ও আমার বোনের কারণে তিনি আনোয়ার গং দের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন। কথাগুলো আমি মশাহিদ চাচাকে জানালে তিনি আমাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে আমার নানা বাড়ীতে (দানাপুর) পাঠিয়ে দেন (নানা বাড়ীর সাথে আমার বাবার সর্ম্পক নেই)। আমার বাবা আমাকে না পেয়ে গত ০৪-১০-২০২৩ইং তারিখে জুড়ী থানায় একটি জিডি করেন। যার নং ১৮৪। গত ০৬-১০-২০২৩ইং আমার চাচা মশাহিদ মিয়া আমার নানা বাড়ী থেকে আমাকে এনে আমার ফুফুর বাড়ী বেলাগাঁও গ্রামে নিয়ে যান। সেখান থেকে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে। সংবাদ সম্মেলনে এলাকার মুরব্বীগন উপস্থিত ছিলেন।