সংসদ ভেঙে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি ৪০ বিশিষ্টজনের

সংসদ ভেঙে দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় সেই দাবি জানিয়েছেন দেশের ৪০ বিশিষ্টজন।

রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ৭ জানুয়ারি একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে সরকার/নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। নির্বাচনের আগে নির্বিচারে মামলা, গ্রেপ্তার, বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় সাজাপ্রদান ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন এমনকি রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে কেবল তাদেরই ডামি প্রার্থী ও অনুগত দলগুলোর প্রার্থীদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ফলে এই নির্বাচনে পছন্দমতো যথার্থ বিকল্প বেছে নেওয়া থেকে দেশের নাগরিক বঞ্চিত হবেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের ফলে সরকারের জবাবদিহিতা বিলীন হয়ে যায়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে এবং আইনের শাসন ও সুশাসন সুদূরপরাহত হয়ে পড়ে। আমরা অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশন/সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। এ লক্ষে তপসিল বাতিল করে সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদ অনুসারে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার আহ্বান জানাচ্ছি।

তফসিল পেছানোর পক্ষে বিবৃতিদাতারা বলেন, এ পদক্ষেপ নেওয়া হলে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন, সমঝোতায় পৌঁছান, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি/জামিন প্রদান এবং নতুন তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের পর্যাপ্ত সময়-সুযোগ পাওয়া যাবে। এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে একতরফা নির্বাচনের লক্ষে বিরোধী দলের প্রতি দমননীতি অব্যাহত রাখলে সরকারের বৈধতার সংকট থেকে যাবে, সমাজে ক্ষোভ ও বিরোধ বৃদ্ধি পাবে এবং রাষ্ট্রের শক্তি, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক সচিব সৈয়দ ড. মারগুব মোর্শেদ, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবিএম সিরাজুল ইসলাম, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক ড. সি আর আবরার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খানসহ আরও অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *