দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে ১১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ১৭ জন।
এর মধ্যে ৮ জন প্রার্থীই বেছে নিয়েছেন ঈগল প্রতীকটি। জনমনে প্রশ্ন জাগছে কেন ঈগল পাখিই বেছে নিলেন প্রার্থীরা। রহস্য উন্মোচন করে এই প্রতীক নেওয়ার পেছনের কাহিনী বলেছেন হবিগঞ্জ-৪ আসনের একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
জানা যায়, সিলেটে ৪ জন, হবিগঞ্জে ৪ জন, সুনামগঞ্জে ৬ জন এবং মৌলভীবাজারে ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা তাদের দলীয় প্রতীক পেয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও পেয়েছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতীক। বিভাগের ১৭ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঈগল প্রতীক। ৮ জন প্রার্থী বেছে নিয়েছেন প্রতীকটি। এছাড়া ট্রাক প্রতীক নিয়েছেন ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, কাঁচি ও কেটলি প্রতীক নিয়েছেন দুইজন করে প্রার্থী, এবং ট্রাক্টর প্রতীক নিয়েছেন একজন প্রার্থী।
স্বতন্ত্রদের মধ্যে অনেকেই দলীয় মনোনয়ন পাননি। এত করে নিজেদের মধ্যে বাড়ে কিছুটা ক্ষোভ। কেউ দলীয় স্থানীয় প্রার্থীদেরকে পছন্দ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় প্রতীক সবসময় একটি ইতিহাস বহন করেন। তবে স্বতন্ত্ররা সেইটা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই কি তারা স্ব্তন্ত্র হয়ে নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়েছেন? এমন প্রশ্নও উঠছে।
তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের শক্তিমত্তাকে জিইয়ে রাখাই ঈগলের ধর্ম- এমনটাই মনে করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন । যিনি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে নিজের স্পষ্টবাদিতার জন্য বেশ জনপ্রিয়। তিনি নিজের পছন্দেই ঈগল নিয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। এজন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
‘নির্বাচনে ঈগল প্রতীক কেন তিনি প্রথম পছন্দ রাখলেন’-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমার একটি ইচ্ছা হচ্ছে গিয়ে ঈগল পাখি নেওয়া। আপনারা জানেন যে, যখন ঝড়-তুফান হয় তখন পৃথিবীতে পাখির মধ্যে একমাত্র ঈগল নিচে নামে না। বরং তুফান ঝড়ে উপরে উঠে যায়। ওই পাখি কিন্তু নিচে নেমে আশ্রয় নেয়না।’’
এ ব্যাখা দিয়ে নির্বাচনে তিনি জনগণের ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। সুমন বলেন, ‘‘আমার একটি ভালো দিক হচ্ছে যে , আমি যদি শতকরা ২০শতাংশ ভোট ভালোবাসার মানুষের পেয়ে থাকি; আর বাকি ৫০ ভাগ ভোট পাবো তাদের, যাদের অনেকেই মন্ত্রী ও তার লোকদের দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত নিপিড়িত হইছেন। এই ৫০ শতাংশ এবং আমার ২০ শতাংশ মিলে মোট ৭০ শতাংশ মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আমি জয়ী হতে চাই। এটা আমার ধারণা। আমি তাদের ভালোবাসাকে অক্ষুণ্ন রাখতে চাই। এবং আমাকে যদি আমার এলাকার মানুষ ভোটের মাধ্যমে ঋণগ্রস্ত করে, আমি বাকি জীবন তাদের ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করবো।’’
১৯ আসনে স্বতন্ত্ররা কে কি প্রতীক পেলেন?
সিলেট জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের ৩৩ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২ জন প্রার্থী রয়েছেন সিলেট-৫ আসনে। সিলেট ৩ ও সিলেট-৬ আসনে রয়েছেন ১ জন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট-৩ আসনে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল পেয়েছেন ট্রাক প্রতীক।
সিলেট-৫ আসনের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী পেয়েছেন কেটলি প্রতীক। আর অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ আল কবির পেয়েছেন ট্রাক্টর প্রতীক।
সিলেট-৬ আসনে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন পেয়েছেন ঈগল প্রতীক।
হবিগঞ্জ জেলার ৪টি আসনে ৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন স্বতন্ত্র ছাড়া বাকি সকলেই দলীয় প্রার্থী।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে রয়েছেন দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তন্মধ্যে সাবেক এমপি কেয়া চৌধুরী ঈগল, এবং গাজী মোহাম্মদ শাহেদ ট্রাক প্রতীক পেয়েছেন।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান ঈগল প্রতীক পেয়েছেন।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন পেয়েছেন ঈগল প্রতীক।
সুনামগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনে ২৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তন্মধ্যে ৬ জন ছাড়া বাকি সকলেই দলীয় প্রার্থী।
সুনামগঞ্জ-১ ( তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন কেটলি প্রতীক, এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদ পেয়েছেন ঈগল প্রতীক।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সংসদ ড. জয়া সেন গুপ্তা পেয়েছেন কাঁচি প্রতীক এবং সাবেক সচিব মো. মিজানুর রহমান ঈগল প্রতীক পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত মো. এনামুল কবির ইমন পেয়েছেন ঈগল প্রতীক।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনে আওয়ামী লীগের শামিম আহমদ চৌধুরী ঈগল প্রতীক পেয়েছেন।
মৌলভীবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২২ জন প্রার্থী। তন্মধ্যে কেবল ৩ জন ছাড়া বাকি সকলেই দলীয় প্রার্থী।
মৌলভীবাজার-১ আসনে মোট প্রার্থী ৪ জন। তন্মধ্যে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ময়নুল ইসলাম পেয়েছেন ট্রাক প্রতীক।
মৌলভীবাজার-২ আসনে মোট প্রার্থী ৮ জন। কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের পদত্যাগী চেয়ারম্যান এ. কে. এম সফি আহমদ সলমান পেয়েছেন ট্রাক ট্রাক। এই আসনের অপর স্বতন্ত্রী প্রার্থী মো. আব্দুল মতিনের প্রতীক কাঁচি।
সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৭ জানুয়ারি ব্যালট পেপারে হবে ভোটগ্রহণ।