নৌকা নুহ নবির, নৌকা ক্ষমতায় আসলেই মানুষের উন্নতি হয় : সিলেটে শেখ হাসিনা

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলিয়া মাদরাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন- ২০০১ সালের নির্বাচনে আমেরিকা আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দিলো না। কেন দিলো না? কারণ- বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাস। ওই আমেরিকা প্রস্তাব করল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমেরিকার কোম্পানি এখানে গ্যাস উত্তোলন করে। আমি বলেছিলাম- আমি গ্যাস বেচবো না। এই গ্যাস আমাদের জনগণের, এই গ্যাস জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হবে। জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করে যদি ৫০ বছরের রিজার্ভ রেখে অতিরিক্ত থাকে তাহলে বেচবো। তারা খুব নাখোশ হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। তা ছাড়া আমাদের দেশেরও কিছু লোক ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এলো বিএনপি-জামায়াত জোট। যে বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ভোট চুরি করেছিল। ভোট চুরির অপরাধে এ দেশের মানুষ আন্দোলন করে ওই খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। সেই ক্ষমতাচ্যুত, ভোটচোর, জনগণের সম্পদচোর বিএনপিকে ক্ষমতায় বসালো ভোট কারচুপির মাধ্যমে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। সে ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেজন্য তার পিঠে বাহবা দিয়ে ক্ষমতায় বসালো। তার রেজাল্ট কী? দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, দুঃশাসন। দেশে ঘটা সব ধরনের নাশকতায় বিএনপির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন- বিএনপি বাণিজ্য করেই ধ্বংস করেছে নির্বাচন। একজন লন্ডনে বসে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। আরেকজন গুলশানে বসে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। আবার পল্টন থেকেও আরেকবার বিক্রি করেছে। তারা এভাবে নির্বাচনকে বাণিজ্যে পরিণত করে ধ্বংস করেছে। এছাড়া লন্ডন থেকে হুকুম দিয়ে মানুষ পোড়ানো বিএনপির চরিত্র। আমরা যখন উন্নয়ন করছি- বিএনপি তখন আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে। আগুনসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা আগুন দেয় তাদের মনে রাখা উচিত- আগুন নিয়ে খেললে ওই আগুনেই হাত পুড়বে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন- আল্লাহ জন বুঝে ধন দেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্যাস পায়নি, আওয়ামী লীগের আমলে সেসব স্থানেই গ্যাসের সঙ্গে তেলও পাওয়া গেছে। বিএনপির আমলে মিললে এসব তারা লুটেপুটে খেতো, কিন্তু আমরা এসব সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করছি।

সিলেট বিভাগজুড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের করা উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন- বিগত সময়ে সিলেটে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে সরকার। অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবানয়াধীন। এগুলোর মধ্যে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস নির্মাণ, আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মাণ, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সিলেট বাধাঘাট বিমানবন্দর সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আধুনিকায়ন, সিলেটে নতুন রেলস্টেশন নির্মাণ, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ও সিলেট-তামাবিল সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, জাফলং থেকে সাদাপথর পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়ক স্থাপন, ২৮১টি সড়ক-মহাসড়ক স্থাপন ও সংস্কার, ৫৩টি সেতু নির্মাণ, ৬টি সেতু নির্মাণাধীন, ২ হাজার ৩১ কিলোমিটার সড়ক ও দুই হাজার দুইশো ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, মাছের হ্যাচারি, হাইটেক পার্ক, শেখ রাসেল ডিজিটাল ও ইনকিউবেশন সেন্টার (আইটি সেন্টার), সিলেট-ঢাকা-চট্টগ্রামের রেললাইন সড়ক দুই লেনে উন্নীতকরণ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাতাতালে নতুন ভবন নির্মাণ, হাসাতালটিতে ১০০ বেডের বার্ণ ইউনিট, সিলেটে অত্যাধুনকি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ এবং সুরমা ও মুনসহ নাব্যতা হারানো নদীগুলো খনন প্রকল্প অন্যতম।

বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। সিলেটে যাদের নৌকা প্রতীক দিয়েছি, তাদের বিজয়ী করুন। কারা কারা আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন হাত তুলে দেখান এবং ওয়াদা করুন। এসময় উপস্থিত সবাই হাত তুলে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করেন।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির আহমদ ও জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় মন্ত্রী ও এমপিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এর আগে বুধবার সকাল থেকেই মহানগরের বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাস, মাইক্রোবাস ও ট্রাকে চড়ে এবং পায়ে হেঁটে স্লোগানে স্লোগানে জনসভাস্থলে আসেন। বেলা ২টার দিকে কানায় কানায় ভরে উঠে জনসভাস্থ।

বুধবার সিলেট থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। হযরত শাহজালাল ও শাহপরাণ (রাহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম শেষে বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে সভামঞ্চে আসেন তিনি। সভাস্থলে পৌঁছার পর স্লোগানে মুখিরিত হয়ে উঠে পুরো সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠ। মঞ্চে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত নেতাকর্মী ও জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে বসার পর ‘বাবা শাহ জালালের দেশ সিলেট ভূমিরে…’ এবং ‘কোন মেস্ত্ররি নাও বানাইছে কেমন দেখা যায়…’ গান দুটি পরিবেশন করা হয়।

পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করেন। বক্তব্য দেন ৪টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক- সড়ক-যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী- সিলেট-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেসা হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং অভিনেত্রী তারিন জাহান।

বুধবার বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৬০১ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

জনসভা শেষে একটি ফ্লাইটে সিলেট ছাড়েন শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *