রংপুরের অর্থকারী ফসল সুপারির ফলন ভালো দামে খুশি স্থানীয় সুপারির বাগান মালিকরা। সুপারির ভালো ফলন পেয়ে হাসি ফুটেছে সুপারির বাগান মালিকদের মুখে। মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি উৎপাদনে উপযোগী।
এ অঞ্চলে এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে সুপারি গাছ নেই। এছাড়াও বিশাল-বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে সুপারি বাগান। ছায়া যুক্ত মাটি সুপারির বাগান থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। অর্থকারী এ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। উৎপাদিত এ ফসলের বাজার দর ভালো থাকায় সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে, পরে এ ফুল থেকে সৃষ্ট সুপারি পুরোপুরি পাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে। মূলত কার্তিক মাস আর অগ্রহায়ণ মাসেই সুপারির ভরা মৌসুম। আশ্বিন মাসের শুরুর দিকে বাজারে সুপারি আসতে শুরু করে। এতে সুপারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় সঠিবাড়ী হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে সুপারি ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। জেলার ৮ উপজেলা মধ্যে পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরে সুপারির উৎপাদন ও চাষাবাদ বেশি। এলাকার সব হাটের মধ্যে সঠিবাড়ী হাটে আমদানি হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের প্রায় ৫০ ভাগ নদীনালা, খালডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি বা মটিতে গর্ত করে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা, পানিতে ভিজিয়ে রাখা সুপারি (মজা) সুপারি নামে এলাকায় পরিচিত । এখান কার ৫০ ভাগ সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। রংপুরে সুপারির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র না থাকায় অনেক সময় কৃষকরা সুপারির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
জানা যায়, সুপারি গাছ একবার রোপণ করলে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই টানা ২০-৩০ বছর ফলন দেয়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশী আয় করা যায়। সুপারি বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগ-বালাই কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশী ঝুঁকেছেন।
সুপারির বাগান মালিকরা জানান, এখানকার প্রতিটি বাগানে সুপারি পেকে হলুদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। বাগানে এখন পাকা সুপারির হলুদ রঙয়ের সমারোহ, মাইলের পর মাইল পাকা সুপারির হলুদ রঙয়ে ছেয়ে গেছে। তাঁতে হাঁসি ফুটেছে সুপারির বাগান মালিকদের মুখে। এছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি বাগান থেকে ঠিকা চুক্তি কেনে। এতে করে অনেক সুবিধা। এছাড়াও তারা জানান, সুপারি গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণা-বেক্ষণে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতা এবং তদারকির কারণে গাছে রোগ-বালাই কম ও ফলন বেশি হয়েছে। গাছ রোপণ ও সুষ্ঠু রক্ষণা-বেক্ষণে কৃষি বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নে রংপুরে এ অর্থকরী ফসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে বলেও জানান তারা।
শঠিবাড়ী হাট ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদামতো সুপারি স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। এ বছর প্রতি (বিষ) সুপারি (২২০টি) মাণভেদে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি দাম না হলেও সুপারি ফলন এবার আড়াই গুন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, সুপারি রংপুরের অর্থকারী ফসলের মধ্যে একটি অন্যতম ফসল। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারি চাষ, পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষি বিভাগ চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছে। সুপারি বাগান করার মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।