মুখের নিরীহ রোগ থেকে ক্যান্সার

লিউকোপ্লাকিয়া ঃ এটি হল জিহবা, মাড়ি ও গালের ভিতরে সাদা ব ধূসর রংয়ের ছোপ ছোপ এলাকা যেটা কোন ব্যথা ছাড়াই থাকতে পারে অনেক দিন। একটি ক্যান্সারপূর্ব রোগ যা নিরীহ অবস্থায় থাকতে পারে অনেক দিন। অনবরত বা বার বার প্রদাহজনিত কারণে এটি বেশী হয়। লিউকোপ্লাকিয়া রোগে মুখের অভ্যন্তরে বা গালের মিউকাস মেমব্রেনে প্রথমে সাদা দাগের সৃষ্টি হয়। লিউকোপ্লাকিয়া রোগে প্যাচগুলো দেখতে সাদা অথবা ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে। উপরিভাগ পুরু, শক্ত এবং সামান্য উঁচু হয়ে থাকে। যেহেতু লিউকোপ্লাকিয়া রোগও ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে তাই এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এরকম কিছু দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মুখের লাইকেন প্ল্যানাস ঃ এটি একজন থেকে অন্যজনে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে না। অর্থাৎ এটি ছোঁয়াছে নয়। এ অচলাবস্থা হয় যখন অজ্ঞাত কারণে শরীরের নিজের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মুখের মিউকাস মেমব্রেনকে আক্রমণ করে। আর এ কারণেই একে অটো ইমমিউন ডিসঅর্ডার নামেও অভিহিত করা হয়। যাদের ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস রয়েছে তাদের নিয়মিত মনিটরিং করা উচিৎ। কারণ এ ক্ষেত্রে মুখের অভ্যন্তরে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা বা ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কোনো কারণে বায়প্সি করার প্রয়োজন হলে দেখে নিতে হবে রোগীর শরীরে হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস আছে কিনা? বিশেষ করে ক্ষতযুক্ত লাইকেন প্ল্যানাস-এর ক্ষেত্রে অবশ্যই হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসের পরীক্ষা না করে বায়প্সি করা ঠিক নয়। কারণ হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাসের সাথে লাইকেন প্ল্যানাস-এর একটি যোগসূত্র রয়েছে। আপনার মুখে লাইকেন প্ল্যানাস থাকলে এনএসএ আইডি গোত্রভুক্ত ওষুধ সেবন করবেন না। কারণ এতে করে লাইকেন প্ল্যানাসের অবস্থার অবনতি হতে পারে। প্রয়োজন হলে বিকল্প ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে হবে।

মুখের রেটিকুলার লাইকেন প্ল্যানাস কোনো লক্ষণ ছাড়াই মুখের দুপাশে হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে সাদা লেসি স্ট্র্রাই লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া বাক্কাল মিউকোসাতে প্যাপিউল দেখা যেতে পারে। প্যাপিউল হলো শক্ত ফুলা ত্বক যা এক সেন্টিমিটারের চেয়ে কম হয়ে থাকে। লেসি স্ট্রাইকে ইউকহ্যামস্ স্ট্র্রাই বলা হয়। স্ট্রাই বলতে বোঝায় ত্বকের অসম জায়গা। যা দেখতে ব্যান্ড, স্ট্রাইপস্ অথবা লাইনের মত দেখা যায়।
ইরোসিভ লাইকেন প্ল্যানাস এর চিকিৎসা প্রয়োজন হয় যার কারণে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হতে পারে। ইরোসিভ লাইকেন প্ল্যানাস-এর ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে লালচে বর্ণ দেখা যায়, যা ইরাইথিমা নামে পরিচিত। আক্রান্ত স্থানের চার পাশে সাদা রেডিয়েটিং স্ট্রাই দেখা যায় এবং এ ক্ষেত্রে মাড়িতে আলসার বা ক্ষত দেখা যেতে পারে।

হেয়ারী লিউকোপ্লাকিয়া ঃ এপস্টেন বার ভাইরাসের কারণে জিহ্বায় হেয়ারী লিউকোপ্লাকিয়া নামক সমস্যা দেখা দিতে পারে। জিহ্বায় অবস্থানরত প্যাপিলাগুলো চুলের রঙের মতো কালো বর্ণ ধারণ করে এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতির অবনতি হয়ে থাকে। হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া জিহ্বায় পাওয়া গেলে একজন রোগীর অবৈধ যৌন সম্পর্কের ইতিহাস থাকলে দেখে নিতে হবে ঐ রোগীর শরীরে ঐ ভাইরাস বা অন্য কোনো ভাইরাস আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে ?
জেনিটাল ওয়ার্টস ঃ হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস মুখের অভ্যন্তরে জেনিটাল ওয়ার্টস বা গোটার সৃষ্টি করে থাকে। মুখের অভ্যন্তরে আলসার যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে সে ক্ষেত্রে দেখে নেয়া ভালো আলসারটি ভাইরাস জনিত কিনা? শুধু তাই নয় আপনার মুখে বার বার আলসার হলে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে চিকিৎসার পাশাপাশি আপনি ডাক্তারের বিধি-নিষেধ মেনে চলছেন কিনা? যথাযথ নিয়মাবলী মেনে না চললে মুখের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের রোগ এবং মুখের আলসার বার বার দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে আরো বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং সচেতন হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *